কুষ্টিয়ায় ডিম-মুরগির বাজার বেসামাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় আবারও বাড়ছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। কুষ্টিয়ার বাজারে এক দিনে ডিমের হালিতে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। প্রায় একই রকম দাম বেড়েছে সোনালি মুরগিরও। বাড়তি দরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।

ক্রেতারা বলছেন, সরকারি মনিটরিং না থাকায় যে যার ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে বাড়িয়ে দেয়ায় তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শীতে অনেক খামারে মুরগি মারা গেলে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে।

কুষ্টিয়া পৌরবাজার ঘুরে জানা গেছে, গত সোমবার ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ৪২ টাকায়। মঙ্গলবার প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দাম সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আগের দিন বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়, মঙ্গলবার ১৯০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি আগের দিন ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও মঙ্গলবার বিক্রি হচ্ছিল ২৬০ টাকা কেজি দরে।

কুষ্টিয়া পৌরবাজারে আসা ক্রেতা সেলিম বলেন, সব কিছুর দাম শুধু বাড়ছেই। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো মনিটরিং নেই। দাম বাড়তে শুরু করলে প্রতিদিনই দাম বাড়ে। উপার্জন কম, বাজার করতে এসে কষ্ট হচ্ছে।

আরেক ক্রেতা আব্দুল্লাহ আলী বলেন, ডিমের দাম কয়েক দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা হালি। বাড়তে বাড়তে আজ (মঙ্গলবার) ৪৪ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। কেউ কেউ ৪৫ টাকাতেও বিক্রি করছেন।

আফরোজা বেগম বলেন, সঠিক মনিটরিং না থাকায় এভাবে দাম বাড়ছে। প্রতিদিন দাম বাড়লে আমাদের পুষ্টি ছাড়াই থাকতে হবে। ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। কেউ কেউ ২০০ টাকাও চাচ্ছে। আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। এত দাম দিয়ে মাংস খাওয়া সম্ভব না।

খামার থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণেই বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। দোকানি রনজুর আহমেদ নিশান বলেন, ডিমের দাম বাড়ছেই। সরবরাহ পর্যাপ্ত, কিন্তু খামার থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ঠিকমতো মনিটরিং করলে দাম কমে আসতে পারে।

মুরগি বিক্রেতা সোহেল বলেন, কয়েক দিন আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৪০ টাকা। বাড়তে বাড়তে এখন ১৯০ টাকায় এসে ঠেকেছে।

আরেক বিক্রেতা হারুন অর রশিদ বলেন, মুরগি দিচ্ছে না খামারিরা। প্রতিদিন দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

খামারিরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে পোলট্রি ফিড, ওষুধ ও বাচ্চার দাম বাড়ায় চরম বেকায়দায় তারা। কুষ্টিয়া জেলা পোলট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, শীতে খামারে মুরগি মরে গেছে। এখন বন্ধ রয়েছে ৭০ শতাংশ খামার। যে পরিমাণ চাহিদা আছে, খামারিরা তা উৎপাদন করতে পারছেন না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখে মুরগি ও ডিমের দাম দিতে হবে। সরকারিভাবে প্রণোদনা দিতে হবে। না হলে এই খাতটিকে থাকবে না।

এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মুরগি ও ডিমের দাম তেমন একটা বাড়েনি বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের বাইরে সব পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তেমন কিন্তু বাড়েনি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমলে ফিডের দাম কমে আসবে। তখন মুরগি ও ডিমের দামও কমে আসবে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেলা জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, মঙ্গলবার আমার টিম বাজারে মনিটরিং করেছে। দাম জেনে এসেছে। খামার থেকে দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেখা হচ্ছে কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছেন কি না। সামনের বৈঠকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

রিলেটেড পোস্ট

Leave a Comment